
নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলনমেলা
- আপলোড সময় : ১৩-০২-২০২৫ ০৫:৩৯:৫৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৩-০২-২০২৫ ০৫:৩৯:৫৬ অপরাহ্ন


অমর একুশে বইমেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে পাঠকের ভিড়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আগমনে মুখর প্রাণের বইমেলা। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই বইমেলায় আসছেন। তবে তাদের মধ্যে বড় একটি অংশই আসছেন মেলা ঘুরে দেখতে। তাই বলে কি মেলায় ক্রেতা কমেছে? মোটেই না। ছুটির দিন না হলেও মেলায় উল্লেখযোগ্য ক্রেতা ছিল। গতকাল বুধবার জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রথম বইমেলার ১২তম দিন।
দেশের নানা প্রান্ত থেকে হরেক রকমের পাঠক আসেন বইমেলায়। তাদের মধ্যে অনেকে বই দেখেন, কেউ বইয়ের সঙ্গে ছবি তোলেন, আবার অনেকে বই কেনেন। বই কেনার বাইরে বাহারি নকশার স্টলের সামনে অনেকে সেলফি তোলেন। সেটি আবার হাসিমুখে ফেসবুকে আপলোড করতে দেখা যায় অনেককে। অনেকে ছুটে যান খাবারের দোকানগুলোয়। এর বাইরে কেউ মানুষের স্কেচ আঁকেন, কেউ ফুল, কেউ পানি বেচে। কেউ মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে বিক্রি করেন খেলনা। বইমেলা তাই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
মেলা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের বইমেলায় পাঠকের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে উপন্যাসের বই। আবার জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রকাশিত বইগুলোও ভালো বিক্রি হচ্ছে। একক ব্যক্তি হিসেবে উপন্যাস বিক্রির তালিকায় এবারও ওপরের সারিতে রয়েছেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ। এ ছাড়া সাদাত হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের বই বিগত বছরগুলোর মতো এবারও প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। তরুণীদের একটি বড় অংশ মেলায় সাদাত হোসেনের অটোগ্রাফসহ বই কিনতে ও তার সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা যায়।
প্রথমা প্রকাশনীর বিক্রেতা নাফিজ বলেন, সব ধরনের বই আমাদের প্রকাশনীতে আছে। তবে জুলাই আন্দোলনের তিনটি নতুন বই ভালো বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ইতিহাসভিত্তিক অন্য বইগুলোও ভালো বিক্রি হচ্ছে।
মাওলা ব্রাদার্সের বিক্রেতা তামিম আল রাজি বলেন, আমাদের এখানে ইতিহাস ও উপন্যাসের বই সবসময়ই বেশি প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি সায়েন্স ফিকশন ও অন্যান্য বই রয়েছে। তবে প্রতিবারের মতো এবারও পুরোনো উপন্যাস ও ইতিহাসের বইগুলোয় পাঠকের বেশি আগ্রহ।
বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, অমর একুশে বইমেলার ১২তম দিনে গতকাল বুধবার নতুন বই এসেছে ৮৯টি। এর মধ্যে গল্পের বই-১৫টি, উপন্যাস-২২টি, কবিতা-২৭টি, গবেষণা-৩ টি, অন্যান্য বই এসেছে-২২টি।
মেলায় নন্দিত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের দুই বই : নন্দিত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের ‘নূরজাহান’ উপন্যাসের জনপ্রিয়তা বাংলা সাহিত্যকে পৌঁছে দিয়েছিল সব শ্রেণির পাঠকের কাছে। আজও কিশোর থেকে বৃদ্ধ সবার কাছে তার লেখা সমান জনপ্রিয়। এবারের অমর একুশে বইমেলায় ইমদাদুল হক মিলনের দুটি বই এসেছে। এর মধ্যে একটির নাম ‘পরাধীনতা’। অপর বইটির নাম ‘রহস্যময় জঙ্গলবাড়ি’। ১৯৭৯ সালের কথা। সেই সময়কার পশ্চিম জার্মানিতে জীবন বদলের আশায় চলে গিয়েছিলেন লেখক ইমদাদুল হক মিলন। দুই বছর শ্রমিকের জীবন যাপন করে ফিরে এসে লিখেছিলেন ‘পরাধীনতা’। এই উপন্যাস পড়ে চমকে উঠেছিলেন দেশের বিখ্যাত লেখক, কবি, বুদ্ধিজীবীরা। তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র অসহায় মানুষের এক নির্মম জীবনচিত্র এই উপন্যাস। ১৯৮৫ সালে প্রথম প্রকাশিত বইটির এবার তৃতীয় সংস্করণ এনেছে অন্যপ্রকাশ। বিখ্যাত এই বই পাঠক এবারও আগ্রহ নিয়ে পড়ছেন। ‘পরাধীনতা’র প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। বইটির বাজারমূল্য রাখা হয়েছে ৪৫০ টাকা। বইমেলায় অন্য প্রকাশের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বইটি। এছাড়া অনন্যা এবার প্রকাশ করেছে ইমদাদুল হক মিলনের কিশোর উপন্যাস ‘রহস্যময় জঙ্গলবাড়ি’। রহস্যে ঘেরা বিশাল এক জঙ্গলবাড়ির ভুতুড়ে গল্প নিয়ে এগিয়েছে উপন্যাসটি। পড়তে পড়তে অনেক সময়ই পাঠককে ভাবনায় পড়তে হয়, এটি বাস্তব, স্বপ্ন নাকি অন্য ভূবনের গল্প? এই বইটিরও প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। মেলায় অনন্যা প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বইটি। মূল্য রাখা হয়েছে ৩০০ টাকা।
আলোচনা অনুষ্ঠান : গতকাল বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘সেøাগান : বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারাবাহিকতায় বাকশাল গঠন, বাংলা সাহিত্যের দায় ও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসান রোবায়েত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মঈন জালাল চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন ফরহাদ মজহার।
প্রাবন্ধিক বলেন, মানুষের ইতিহাসে সেøাগানকে ছোটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সেøাগান আমজনতার মুখ থেকে উচ্চারিত হয়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনরত মানুষের মুখে মুখে। সেøাগানই একমাত্র শিল্পমাধ্যম যা তাৎক্ষণিকভাবে আমজনতাকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত করে তোলে। বাংলা ভাষার সেøাগান সমসাময়িক ভাষা প্রবণতাকে আত্মস্থ করেছে উদারভাবে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে তৎপরবর্তী সকল আন্দোলন-সংগ্রামে আমজনতার মুখের ভাষা থেকেই সেøাগানের উদ্ভব ঘটেছে। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানেও আমজনতার ভাষায় রচিত সেøাগানই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে।
আলোচক বলেন, ভাষা শুধু একটা ভাষিক রূপই নয়, সেটি একই সঙ্গে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রতিরোধেরও খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সেøাগানের মধ্য দিয়ে মানুষের কথা উঠে আসে, এটি মানুষের প্রতিবাদের ভাষা। আমাদের অভ্যন্তরে ও চেতনায় যে ক্রোধ, প্রতিবাদ জমে ওঠে তারই বহিঃপ্রকাশ হলো সেøাগান। ফ্যাসিবাদী শাসনের অধীনে দীর্ঘ দিন আমাদের মনে জমে থাকা ক্রোধ জনমানুষের ভাষা হয়েই ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের সেøাগানগুলোতে উঠে এসেছে।
সভাপতির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, আমাদের দেশে ফ্যাসিবাদী চিন্তাচেতনা গড়ে ওঠার পেছনে যে মাইলফলকগুলো রয়েছে, বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যবহৃত সেøাগানগুলোর মধ্যদিয়ে সে মাইলফলকগুলো আমরা অনুধাবন করতে পারি। এদিন লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেনÑকবি ফয়েজ আলম এবং কবি সৈয়দ রনো।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : গতকাল অমর একুশে বইমেলার ১২তম দিনে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী শিরিন জাহান এবং শাকিলা মতিন মৃদুলা। এদিন ফরিদা পারভীনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অচিন পাখি’ এবং শরিফুল ইসলামের পরিচালনায় ‘জাগরণী সাংস্কৃতিক সংগঠন’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী বর্ণালী সরকার, রাজিয়া সুলতানা, মুন্নি কাদের, নুসরাত জাহান, ঐশ্বর্য সমদ্দার, ড. আফরোজা বেগম ইয়াসমিন, মনীষ সরকার এবং শ্রাবন্তী ধর। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন পুলিন চক্রবর্তী (তবলা), উসায়েদ আহমেদ প্রতীক (কী-বোর্ড), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি) এবং ফিরোজ খান (সেতার)।
আজকের অনুষ্ঠান : আজ বৃহস্পতিবার অমর একুশে বইমেলার ১৩ম দিন মেলা শুরু হবে বিকেল ৩ টায় এবং চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত। এদিন বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২০২৪’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সারোয়ার তুষার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন যোবায়ের আল মাহমুদ এবং নুসরাত সাবিনা চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন মাহবুব মোর্শেদ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ